May 20, 2024, 3:47 am

আবুরী মিয়া পাড়া জামে মসজিদের স্মৃতিকথা

মীর মামুন হোসেন।। মনে পড়ে একসময় মসজিদে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর জন্য কুপির তেল জোটেনি। মা হারিকেন হাতে দিয়ে বলত তোর দাদাকে দিয়ে আয় দেখিনি। আমি দাদার পিছে দৌড়ে যেতে, দাদা ততক্ষনে গড়ানের কাছে। দাদার হাতে হারিকেনটা দিতেই দাদা গাল ভরা হাসি দিতো। তাতে ছোট মন ভরে যেত। দাদা হারিকেন নিয়ে মসজিদে সন্ধ্যা বাতি দিত। বিনা বেতনে বংশ পরম পরায় এই মসজিদের শেষ ইমাম। মীর মোসারেফ হোসেন একজন সাদা মনের সৎ ও নিষ্ঠাবান ধর্মপরায়ণ মানুষ। মীর মোসারেফ হোসেন (ইমাম) তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন মীর মাহমুদল হক মাষ্টার (অনির্ধারিত) নিজ দায়িত্ব ভেবে ইমামতি করেছেন। তখন মসজিদে মাইক ছিলো না খালি মুখে আযান দিত, দারাজ কন্ঠের অধিকারী মোঃ নাসির উদ্দীন (মেম্বর), মোঃ হায়দার হোসেন চৌধুরী (হায়দার মী) মীর মাহামুদল হক মাষ্টার। কুটা বাড়ি থাকতেন রায়হান ডাক্তারের স্ত্রী যাকে আমরা চাড়ির দাদি বলে ডাকতাম। তিনি পরহেজগারি নামাজি বান্দী ছিলেন। খালি মুখের আযান কখনো সখনো তার কান অবধি পৌছাতো না। বিধায় নামাজ পড়তে সমস্যা হত। বর্ষা কালে কখন সকাল হত আর কখন সন্ধ্যা নামত তিনি তা ঢের বুঝে উঠতে পরতো না। তাই তিনি ব্যাটারি চালিত মাইকের ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিলেন । সে সময় আশেপাশের কোন মসজিদে মাইক ছিলোনা। আমাদের মসজিদের মাইকের আজান শুনে রাজনগর, রাজপুর রাজনগর, নওদা পাড়া, চরনওদা পাড়া, আশান নগর, মাগুরা, কাকিলা দহ, হাটপাড়া, মাঠপাড়া সহ এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ সালাত আদায় করতেন। মীর মোসারেফ হোসের মৃতুর পর মসজিদে ইমাম শূণ্য হওয়ায়। মসজিদ যথা সময়ে আযান ও নামাজ হতোনা। মসজিদ মুখি মানুষ গুলো সব এদিক ও দিক ছিটকে গেল। মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ সেটা রক্ষা করলেন। দীর্ঘদিন পর। মোঃ নাসির উদ্দিন (মেম্বর), মীর মুছাদ্দেক হোসেন (মুছা মেম্বর), মোঃ মিনহাজ উদ্দিন মন্ডলের উদ্যোগে আল্লাআলে ব্যক্তি কোরআনে হাফেজ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ( নাটোর) কে মসজিদের ইমাম নিযুক্ত করা হয়। এত বড় গ্রামে তার স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য মাথা গোজার ঠায় হয়নি। এ বাড়ী দশদিন ও বাড়ী দশ দিন এভাবে দিনাতিপাত করতেন। পরে পরিবার সমেত বসবাসের জন্য মোঃ হায়দার হোসেন চৌধুরী (হায়দার মী) পরামর্শে রবি চৌধুরীর বসত ভিটায় বসত গড়লেও সেখানে স্থায়ী হতে পারেননি। নাসির মেম্বর তার নিজ ভিটে স্বপরিবারে তার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর নির্দেশ না মানলে, রাসুলের দেখানো পথে না হাটলে। কিয়ামতের দিন শেষ বিচারের সময় আল্লাহ তোমার ক্যাইট বাইর করে দেবে। ইউসুফ হুজুরের এ রকম ক্যাইট বাইর করে দেওয়া গড়ম ওয়াজ নছিয়তে, মানুষকে বেশ উজ্জীবিত হতে দেখেছি। ১৬ শতকে সুপ্রতিষ্ঠিত মোঘল শাসনামলের এই দৃষ্টি নন্দন মসজিদটিতে দিন দিন মুসল্লি বৃদ্ধি পাওয়ায়। ভিতর এবং বাহিরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মুজিবর রহমান চৌধুরী তার নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদের জায়গা সম্প্রসারণের লক্ষে একটি একতলা ভবণ নির্মাণ করে দেন। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির সৌন্দর্যময় করা লক্ষে মোঃ খোকা চৌধুরী ও মিঠু চৌধুরীর অর্থায়নে টাইলসের কাজ সু সম্পন্ন করা হয়। যা আজও চোখের সামনে দৃশ্যমান। স্পষ্টতই আছে সে কথা দেশ জুড়ে যখন বিদুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। মনে পরে তখন রমজান মাস চলছিলো। তারাবির নামাজের সময় বিদুৎ থাকতো না। ধর্ম প্রাণ মুসুল্লিদের নামাজ পড়তে কষ্ট হত। সে কষ্টের কথা বিবেচনা করে মোঃ বেনজির আলম চৌধুরী (হিরো চৌধুরী) একটি জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দেন। দিন যায় সময় বদলায় সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বদলালেও বদলায় না বদলাবার নয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কালের স্বাক্ষী হয়ে দীপ্তমান দাড়িয়ে আমাদের মত পাপি বান্দার শেষ আশ্রয়স্থল আমাদের গর্বের এই মসজিদ। এতদঅঞ্চলের ধর্ম প্রচার ও প্রসারের একমাত্র বাতিঘর।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :